Thursday, January 8, 2015

                                পুরুষ মানুষ অনেক কঠিন ভাই !

আমি শাহানা বেগম মানিকগঞ্জ জেলা সিংগাইর উপজেলার ভাটিরচর গ্রামের অতিদরিদ্র ঘরের পুএবধু।স্বামী ইমান আলী একটি ছেলে একটি মেয়ে। জায়গাজমি বলতে শুধু ভিটাটুকুই আমাদের সম্বল যার পরিমাণ মাএ ৪ শতাংশ। বাবার বড়িতেও অনেক কষ্টে কটেছে আমার টাকার অভাবে লেখা পড়া হয়নি। খুব ছোট বয়সে বাবা আমাকে বিয়ে দেন। বাবার স্বপ্ন ছিল বিয়েরপর আমি সুখী হব। ভালোই কেটেছিল প্রথম কয়েটা মাস। তখন বুঝতে পারিনি ছেলেরা এত কঠিন হয়। স্বামী যা ইনকাম করতো তা দিয়ে সংসার অনেক কষ্টে চলত।বিয়ের কয়েক বছর পর আমাদের প্রথম ছেলে হয়। তারপর সংসারের খরচ আনক বেড়ে যায়। কি করবো ঝুঝতে পারছিলাম না। পাশের বাড়ির এক ভাবি বুদ্ধি দেন বিদেশ যাবার। প্রথমে না বলি কিন্তু বিষয়টি আমাকে ভাবায় আমি স্বমীর সাথে আলোচনা করি ও আমাকে খুববেশী নিষেধ করেনি। আমাদের গ্রামের অনেক বাড়ি থেকে অনেক মেয়ে ও বউ বিদেশে আছে। তাছাড়া বিদেশে যাওয়ার খরচও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কম। ৫৫,০০০ টাকায় স্থানীয় এক দালাল এর মাধ্যমে প্রথমে ওমানে যায়। টাকার প্রায় সবটায় আসে মহাজন থেকে সুদের মাধ্যমে। ওমানে ভলোই কেটেছে ২ বছর তবে ওমান থেকে খুব বেশী বেতন পেতাম না। তাই ২ বছর পর দেশে চলে আসি। প্রথম বিদেশে যাওয়ার টাকা দিয়ে মোটামুটিভাবে সংসার কেটে যাচ্ছিল বাড়ি বানিয়েছি। কিন্তু আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত গাজা, মদ, জুয়া কিছুই বাদ যায় না। ফলে আমি যে টাকা পঠিয়েছি তার সব হিসাব পাই নি। কিছু বলতে গেলে ও আমার গয়ে হাত ওঠাতো। এক বছর দেশে থাকি তখন মেয়ের জম্ম হয়। শুধু পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে ছোট ছেলে মেয়েকে রেখে আবার বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নি। কিন্ত এবার ওমান নয় পড়ি জমায় লবানন। খরচ হয় ৬০,০০০ টাকা এবারও মহাজন থেকে সুদে টাকা নিয়েছি। যে বাড়িতে কাজ করতাম সেই বাড়ির কর্তা দুবাই চাকুরী করতেন। কি কারণে যেন তার জেল হয়।          




সেবাড়িতে কোন খরচ পাঠাতো না। তিন বছর লেবানন ছিলাম একটি কানাকড়িও পাইনি। ওরা আমাকে নির্যাতন করতো না। আমি বেতনের জন্য কত কেঁদেছি তারা আমার কোন কথায় ওরা শোনেনি। পরে আমি তাদের অনুরোধ করি আমাকে দেশে পঠিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু দেশে পাঠানোর ব্যাপারে কোন রকম সাহায্য করেননি। এভাব অনেক দিন কেটে যায়। লেবাননে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির নাম্বার আমার কাছে ছিল সুযোগ বুঝে আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করি এবং সাহায্য চাই। বাসার মালিকের ছোট ভাইয়ের বউ আমাকে বাসা থেকে পালাতে সহায়তা করেছিল। অ্যাম্বাসি থেকে মালিকের বাসায় ফোন দেওয়া হয়। অ্যাম্বাসি আমার হয়ে লেবানন পুলিশকে বিষয়টি জানায় এবং মালিকের বিরুদ্ধে কেস করে। কিন্তু লেবানন পুলিশ অমাকে এ বিষয়ে কোন সাহায্য করেনি।  কেস করার পর ৬ মাস অ্যাম্বাসির এক অফিসারের বাসায় কাজ করেছিলাম ওখান থেকেও কোন টাকা পয়সা পাইনি। শুধু পেটে ভাতে গাধার মত সারাদিন খেঁটেছি। পড়ে অ্যাম্বাসির মাধ্যমে অনেক কষ্টে দেশে ফিরে অসি শুন্য হতে। আমার স্বামী এসব কথা বিশ্বাস করতে এখন নারাজ। সে আমাকে দোষারোপ করে। কিন্তু আমার কি করার ছিল বলেন। নেসার টাকা না জোগার করতে পারলে নির্যাতন করে খেতে দেয় না। পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্ন শেষ আমার মাসুম বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আত্নহত্যা করতে পারি না। কারো সাথে কথা বললে ও আমাকে সন্দেহ করে। কোন কাজ করতে চাই না, কাজ খুঁজতে বললে আমাকে গালিগালাজ করে। বাবা হিসাবে ছেলে মেয়ের প্রতি যে দ্বায়িত্ব এ ব্যাপারে সে উদাসীন। বলেন তো এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়। পুরুষ মানুষ অনেক কঠিন ভাই।


সংগ্রহকারী- প্রদীপ কুমার আইচ।

সহযোগীতায়- নাহিদা সুলতানা।

No comments:

Post a Comment